অর্থনীতি

রমজানের আগেই খেজুরের চড়া দাম কপালে ভাঁজ ক্রেতাদের।

  অনলাইন ডেষ্ক ১৮ মার্চ ২০২৩ , ১১:১২:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ

পরিপাটি প্যাকেটে মোড়ানো খেজুরের বক্স হাতে নিয়ে দাম জানতে চাইলেন আনোয়ার, তবে বিক্রেতা যা বললেন, তাতে তার ভ্রু কুঁচকে গেল।কারওয়ানবাজারের কিচেন মার্কেটে খেজুর কিনতে এসেছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা আনোয়ার ইসলাম, উপলক্ষ সামনে রমজান মাস; তবে দাম শুনে অবাক হয়ে অন্য দোকানে চলে গেলেন তিনি। দাম শুনে কী মনে হচ্ছে?  তিনি বললেন, “বছর ব্যবধানে তো দাম বেড়েছেই, তিন মাস আগেও যে দামে নিয়েছি, এখন তার চেয়েও বেশি। প্যাকেট খেজুরের পুরো বক্স যেখানে ৯০০ টাকা ছিল, এখন সেটা প্রায় ১৪০০ টাকা। রোজায় ইফতারির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হওয়ায় প্রতি বছর দেশের বাজারে আসে নানা রকম খেজুর। এসব খেজুর কিনতে গিয়ে নাম আর মান নিয়ে ধন্দের পাশাপাশি এবার দাম শুনেও কপালে ভাঁজ পড়ছে ক্রেতাদের। কিছুটা সাশ্রয়ী দামে পাওয়ার আশায় কেউ পুরো রমজান মাসের জন্য বেশি করে খেজুর কেনেন পাইকারি বাজারে থেকে। তাদেরই একজন মো. শিপন; বিআইডব্লিউটিসির জাহাজ মধুমতিতে কাজ করেন তিনি। রমজান মাস কাছাকাছি চলে আসায় এবার জাহাজ সদরঘাটে নোঙ্গর করে ঢুঁ মারেন দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি খেজুরের বাজার পুরান ঢাকার বাদামতলীতে। পাঁচ কেজি সাফাভি বা কালমি খেজুরের কার্টন দরদামের এক পর্যায়ে ৩ হাজার ২৫০ টাকায় দোকানি তার হাতে তুলে দিলেন। শিপন বলেন, “দাম তো বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। রমজানের আগে ঘাটের আশপাশে থাকলে প্রতিবছর এখান থেকেই খেজুর নিই। এই কালমি খেজুরের বাক্স গতবছর ছিল ২ হাজার টাকা, এবছর তাদের কেনাই নাকি ৩ হাজার ১০০ টাকা। ঢাকার খেজুরের বাজারের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বছর ঘুরে জাতভেদে ’৩০ থেকে ৫০ শতাংশ’ দাম বেড়েছে খেজুরের। রমজানে এই দাম আরও ‘বাড়তে পারে’ বলে আভাস তাদের। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাদামতলীর পাইকারী খেজুর ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের দোকানের দুই কর্মী জানান, “এখন এক গাড়ি খেজুর আনতে যে টাকা লাগে, এক বছর আগে সে টাকায় তিনগাড়ি খেজুর মিলত। পাইকারিতে নামী খেজুরের দাম বাড়ার রেশ টের পাওয়া যাচ্ছে খুচরা বাজারেও। তবে খুচরা বাজারে বাড়তি দামের প্রভাব পড়েছে ক্রেতার কেনাকাটায়। দাম বেশি হওয়ায় কেনার পরিমাণ কমাতে হচ্ছে অনেককে। খেজুরের এই দাম বৃদ্ধির পেছনে ডলার সংকট ও আমদানি নির্ভরতাকে কারণ মনে করছেন কারওয়ান বাজারে কিচেন মার্কেটে খেজুরের দোকান বিক্রমপুর ভ্যারাইটিজ স্টোরে স্বত্বাধিকারী মো. নজরুল ইসলাম।তার কথায়, সব জিনিসের দাম বাড়ছে, খেজুরের দাম তো বাড়বোই। ডলারের দাম বেশি হইলে বাড়ব না? এইটা তো আর দেশে হয় না। প্রকারভেদে খেজুরের দাম কেমন বেড়েছে, সেই প্রশ্নের উত্তরে এই দোকানি জানান, তার দোকানে ১০-১২ পদের খেজুর আছে। সব খেজুরেই কেজিতে গড়ে ৫০-১০০ টাকা দাম বেড়েছে। পুরনো দাম ফিরেছে? গত এক-দু্ই বছরের তুলনায় খেজুরের দাম বাড়ার বিষয়টি কিছু বিক্রেতা স্বীকার করলেও কেউ বলছেন, বাজারে এখন যে দাম চলছে, সেটি ‘তিন-চার বছর আগের দাম’। তাদের যুক্তি, কোভিড মহামারীর কারণে খেজুরের দাম পড়ে গিয়েছিল; তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ফিরেছে পুরনো দাম। কারওয়ান বাজারের বিক্রমপুর ফল বিতানের বিক্রেতা মো. ফাহিমের ভাষ্য, “যেরকম কিনতে হচ্ছে তেমন বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বেশি বললে ভুল হবে। করোনার জন্য দাম পড়ে গিয়েছিল। এখন আবার তিন চার বছর আগে যেমন দাম ছিল সেখানে ফিরে গেছে। দাম বৃদ্ধির বিষয়টিকে স্বীকার করলেও একে ‘বাড়তি দাম’ বলতে নারাজ কারওয়ান বাজারে কিচেন মার্কেটে খেজুরের দোকান বিক্রমপুর ভ্যারাইটিজ স্টোরে স্বত্বাধিকারী মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “গত চার-পাঁচ বছর আগেও খেজুরের দাম এমনই ছিল। দাম তো বাড়েনি আসলে। গত দুই বছর লকডাউন ছিল। সব বন্ধ ছিল। তাই দাম কম ছিল। এখন আবার চার-পাঁচ বছর আগের দামে পৌঁছেছে। দুই বছর কম দাম থাকার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “করোনার সময় সৌদিতে হজ বন্ধ ছিল। হাজিরা না যাওয়ায় সেখানে প্রচুর খেজুর অবিক্রিত ছিল। এগুলো তখন কমদামে বাংলাদেশে ঢুকেছে। রমজানের কেনাকাটা পুরোপুরি শুরু না হলেও তার ধারণা, খেজুরের কখনও ‘ক্রাইসিস’ হয় না, এবারও হবে না। কোভিডের সময় খেজুরের দাম কম ছিল দাবি করে বাদামতলীর খেজুরের আড়ত মক্কা ফ্রুটসের মালিক আব্দুল জলিল বলেন, “হজ না থাকায় সৌদিতে চাহিদা কম ছিল। মেডজল, আজওয়া, মারিয়াম, সাফাভি, মাবরুমের মত খেজুর সৌদিতে খড়ের গাদার মতো পড়ে ছিল। আমাদের ইম্পোর্টাররা তখন এসব খেজুর কম দামে কিনে বাংলাদেশে এনেছে। গত দুই রমজানে তাই কমদামে এসব খেজুর বিক্রি হয়েছে। কেউ কেউ অনলাইনে ব্যবসাও করেছে। কোভিডের বছরের তুলনায় এ বছরের পরিস্থিত ভিন্ন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এবার সৌদিতেই চাহিদা বেশি। দেশের অনেক আমদানিকারক যারা সৌদি থেকে খেজুর আনে, তারা কিনে সেখানেই বিক্রি করে দিচ্ছে। কারণ দাম ভাল পাচ্ছে। খেজুরের পাইকারি ও খুচরা দামের তফাৎ
জাত পাইকারি দাম (প্রতি কেজি) খুচরা দাম (প্রতি কেজি)
মাবরুম ৭২০ ৮০০-১০০০
দাবাস ২৪০ ২৮০-৩০০
নাগাল ১৮০ ৩০০-৩৫০
জাহিদি ১৩০ ১৪০-১৬০
মরিয়ম ৭০০ ৮০০-৯০০
মেডজুল ৮৪০ ৯০০-১২০০
আম্বার ৫৭৫ ৮০০
সাফাভি/কালমী ৫০০ ৬০০-৭৫০
আজওয়া ৮০০ ৮০০-১০০০
দাবাস ২৪০-২৯০ ২৮০-৩০০
সাদা খুরমা ২৫০ ৩২০
তিউনিশিয়ান ফিট ২৭০ ৪০০-৪৫০
মাশরুখ ৪০০ ৪৫০-৬০০
দাম বেড়েছে কেমন
বাদামতলী পাইকারি ফল বাজারের খেজুরের আড়তদার আব্দুল জলিল জানান, ভাল মানের খেজুরের মধ্যে মেডজলে ৪০০-৫০০ টাকা, মারিয়াম ও মাবরুমে ১৫০-২০০ টাকা, দাবাসে ৩০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে। আবার নাগাল, জাহিদি, দাবাসের মত একটু কম দামের খেজুরে কেজি প্রতি ২০-৫০ টাকা দাম বেড়েছে। পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে কী পরিমাণ খেজুর আমদানি করা হচ্ছে তা ‘জানতে পারেন না’ তারা। ফলে, বাজারে পর্যাপ্ত খেজুর এনে আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে মজুদ করলে তাদের ‘বোঝার উপায় থাকে না’। বাদামতলী বাজারের পাইকারি খেজুর দোকান আল-বাইতুল্লাহ ফ্রেশ ফ্রুটের দোকানি আল-আমিন বলেন, “হাতেগোনা বড় কিছু ইম্পোর্টার আছে। তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, সিন্ডিকেটের মত করে। এলসি, ডলার সংকট যাই বলুক, সব ম্যানেজ করে তারা ঠিকই খেজুর নিয়ে আসে, পরে নিজেদের মত দাম ঠিক করে। তবে মজুদ সিন্ডিকেট বা নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণের অভিযোগগুলো মানতে নারাজ ঢাকা মহানগর ফল আমদানি ও রপ্তানিকারক আড়তদার ও ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল করিম।আমদানিকারক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, “সবাই মিলে বসি। যদি তারা বলে যে আমরা বেশি নিচ্ছি, তাহলে সেটা আপনারা লিখবেন। আমার হিসাবে ৩০% দাম বাড়ছে। হাজিরা না যাওয়ায় গতবছর দাম কম ছিল। এখন তো মধ্যপ্রাচ্যের চাহিদাই মেটানো যাচ্ছে না। এটা সত্য কথা। দেড় মাস থেকে আমরা ন্যূনতম হলেও এলসি খুলতে পারছি। রমজান সামনে রেখে সরকার কিছু সুযোগ করে দিয়েছে। সমস্যা হচ্ছে ডলার রেইট আগে যেখানে ৮৫-৮৬ ছিল এখন তা ১০৮-১১০ টাকা। ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ ডলারে আগে কন্টেইনার বুক করা যেত, এখন সেটা ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৫ হাজার ৬০০ ডলার পড়ছে। এসব কারণে দাম বাড়তি। শুধু শুধু আমদানিকারকের দোষ দিয়ে লাভ নেই। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, “বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের ব্যবসায়ীরা সবাই তার আপার হ্যান্ডকে অভিযোগ করে। কেউই তো ঠিক নেই। পাইকারী ব্যবসায়ীদের কত খেজুর এসেছে, তা জানার ইচ্ছে থাকলে খেজুরের বিপরীতে কতো এলসি খোলা হয়েছে তা জানতে পারে। এটা এমন কোনো গোপন তথ্য নয়। সিন্ডিকেট নিয়ে কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করলে সেটা প্রতিযোগিতা কমিশন দেখবে।”

আরও খবর

Sponsered content

আরও খবর: অর্থনীতি

সিটির সঙ্গে একীভূত না করতে গভর্নরকে বেসিকের কর্মীদের স্মারকলিপি

ওসিডিএল এর নেতৃত্বে- নিরাপদ ও লাভজনক আবাসনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমিন সিটি পূর্বাচলের পথচলা শুরু হয়েছে

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে খেললে সরাসরি কারাগারে পাঠানো হবে: গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব এর দৃষ্টি আকর্ষণ : চট্টগ্রাম বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক-এর নাম প্রস্তাবে ব্যাপক অনিয়ম

এশিয়ান ক্যান্সার ইনস্টিটিউট বিডি প্রাইভেট লিমিটেড এবার কাজ করছেন মরণব্যাধি ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়ে

রিহ্যাব এর বার্ষিক সাধারণ সভা-২০২০ || আবাসন ব্যবসায়ীদের সার্বিক কল্যাণে কাজ করছি – আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট