অর্থনীতি

আগামী ২০৪১ কে সামনে রেখে ৮৬ লক্ষ মেট্রিক টন মৎস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে মৎস্য অধিদপ্তর -কৃষিবিদ খন্দকার মাহবুবুল হক

  অনক আলী হোসেন শাহিদী: ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ , ১০:৫২:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ

দেশের গণমানুষের মৌখিক চাহিদা পূরনের অন্যতম খাদ্য মাছ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষায়- “মাছ হচ্ছে সব থেকে নিরাপদ খাদ্য”। মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ এর ভাষায়- “মাছে ভাতে বাঙালী- এ শাশ^ত পরিচয়েই নিহিত রয়েছে আমাদের জাতীয় জীবনের মৎস্য খাতের গুরুত্ব”। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই প্রাণের বাণীকে সামনের রেখে মৎস্য অধিদপ্তর মূলত কাজ করছে। এই স্বপ্ন পূরনে ২০৪১ কে সামনে রেখে ৮৬ লক্ষ মেট্রিক টন মৎস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে মৎস্য অধিদপ্তর। এই লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম অর্জন হচ্ছে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে মৎস্য অধিদপ্তর ৪৬.২১ লক্ষ মেট্রিক টন মৎস্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে।

অতি সম্প্রতি মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ খন্দকার মাহবুবুল হকের সাথে আমি একান্তভাবে কথা বলেছি। আমি তার নিকট জানতে চেয়েছি- আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ এ দেশে ৮৬ লক্ষ মেট্রিক টন মৎস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কিভাবে সম্ভব? তিনি এ বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদী হয়ে আমার প্রশ্নের ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন। তার দেওয়া উত্তরে মনে হয়েছে রাষ্ট্রের সব রকম ইতিবাচক সহযোগিতা পেলে এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।

মৎস্য সম্পদের এ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে কৃষিবিদ খন্দকার মাহবুবুল হক বলেন- “অভ্যন্তরীন মুক্ত জলাশয়, অভ্যন্তরীন বদ্ধ জলাশয় ও সামুদ্রিক জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদন ও আহরনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে এ অর্জন সম্ভব। ইতিমধ্যে আমরা এই অর্জনের বাস্তবতা দেখতে পেয়েছি। সেই অনুযায়ী প্রকল্পও গ্রহন করেছি। সময়মত প্রকল্প গ্রহন ও প্রয়োজনীয় অর্থের বরাদ্ধ পেলে এ অর্জন সম্ভব। এর ফলে দেশীয় চাহিদা পূরনের পরে বিদেশে মৎস্য রপ্তানীর মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।”

তিনি বলেন- “আমাদের প্রধানমন্ত্রী এদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রুপ দিতে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের এ অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ শীর্ষক সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার তথা ২০৪১ সালের মধ্যে এদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রুপ দিতে ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে ৮ম পঞ্চবার্ষিক যে পরিকল্পনা গ্রহন করেছেন, সেই পরিকল্পনার পথ ধরে আমরা কাজ করছি। এরই অংশ হিসেবে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জেলেদের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, মৎস্য ও মৎস্য পণ্য বাজার সম্প্রসারন, স্থায়িত্বশীল নিরাপদ মৎস্য উৎপাদন ও সর্বোত্তম উৎপাদনশীলতা নিশ্চিতকরন, একই সাথে পরিবেশ সংবেদনশীল অঞ্চলে মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন এবং রক্ষনাবেক্ষন নিশ্চিত করতে কাজ করছি।”

 

তিনি আরো বলেন- “ইলিশ আমাদের অন্যতম জনপ্রিয় ও রপ্তানীমুখী মৎস্য সম্পদ। এই ইলিশ সম্পদের স্থায়ীত্বশীল আহরণ কল্পে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। একই সাথে সম্ভাবনাময় অর্থনীতির ইতিবাচক বিকাশে সামুদ্রিক মাছের মজুদ নিরুপন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের স্থায়িত্বশীল আহরণ, গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণ এবং মৎস্য ও মৎস্য পণ্যের ভ্যালু চেইন উন্নয়নসহ নানাবিধ কার্যক্রম ইতোমধ্যে সফলতার সাথে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে।”

কৃষিবিদ খন্দকার মাহবুবুল হক এ বিষয়ে আরো বলেন- দেশে মৎস্য সম্পদ একটি অতি অত্যাবর্শীয় প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সম্পদ। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে এ দেশের মোট জনসংস্থার ১২ শতাংশ জনগোষ্ঠী মৎস্য সম্পদের নানা কার্যক্রমের সাথে যুক্ত। এ ক্ষেত্রে প্রায় ১৪ লক্ষ নারীসহ ১ কোটি ৯৫ লক্ষ মানুষ মৎস্য সম্পদের সাথে যুক্ত হয়ে জীবিকা-নির্বাহ করছে।” এ বিষয়ে তিনি বলেন- “বর্তমান সরকারের ইতিবাচক প্রচেষ্টা ও মৎস্য বান্ধব কার্যক্রমের কারনে একই সাথে চাষী ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে চাহিদা ভিত্তিক ও লাগসই কারিগরি পরিসেবা প্রদানের ফলে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ৪৬.২১ লক্ষ মেট্রিক টন। উল্লেখ্য যে- ১৯৮৩-১৯৮৪ সালে দেশে মাছের মোট উৎপাদন ছিল ৭.৫৪ লক্ষ মেট্রিক টন। কাজেই বিগত ৫ দশকের ব্যবধানে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৬ গুন।”

তিনি বলেন- “বাংলাদেশ মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিশে^ও বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ঞযব ঝঃধঃব ঙভ ডড়ৎষফ ঋরংযবৎরবং ধহফ অয়ঁধপঁষঃঁৎব ২০২২ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- অভ্যন্তরীন মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ ৩য় অবস্থান ধরে রেখে বিগত ১০ বছরের অভ্যন্তরীন জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম স্থান গত ৬ বছরের মতোই ধরে রেখেছে।” এ বিষয়ে তিনি বলেন- “বিশেষ সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ক্রাস্টাশিয়ান্স ও ফিনফিস উৎপাদনে যথাক্রমে ৮ম ও ১২ তম স্থান অধিকার করেছে। বিশে^ ইলিশ আহরণকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম, তেলাপিয়া উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশে^ চতুর্থ এবং এশিয়ার মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে।” তবে বাংলাদেশ মোট উৎপাদিত মাছের ১২.২২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে।” এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন- “দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান এক শতাংশের অধিক এবং একক প্রজাতি হিসেবে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ। ”বাংলাদেশ ইলিশ”- শীর্ষক ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য নিবন্ধন সনদ (জি আই সনদ) প্রাপ্তিতে নিজস্ব পরিচয় নিয়ে বিশ^বাজারে বাংলাদেশের ইলিশ বিশেষভাবে সমাদৃত। বিশে^র প্রায় দুই- তৃতীয়াংশের অধিক ইলিশ আহরণকারী বাংলাদেশ এখন থেকে বিশে^ ইলিশ নামেও পরিচিতি লাভ করেছে।” এ বিষয়ে তিনি বলেন- “ইলিশ সংরক্ষনে মৎস্য অধিদপ্তর সবরকম প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন ও সময় অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করছে।”
কৃষিবিদ খন্দকার মাহবুবুল হক ইলিশ সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই প্রতিনিধিকে বলেন- “২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৫.৬ লক্ষ মেট্রিক টন ইলিশের উৎপাদন হয়েছে। যা ২০১০-২০১১ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ৩.৪০ লক্ষ মেট্রিক টন। বিগত ১০ বছরে ইলিশ উৎপাদান বেড়েছে ৬৬.১৭ শতাংশ। তিনি বলেন- ঐরষংধ ঋরংযবৎরবং গধহধমসবহঃ অপঃরড়ৎ চষধহ (ঐঋগঅচ) প্রনয়ন ও বাস্তবায়নের ফলে ইলিশের উৎপাদন ২০০৪-২০০৫ থেকে ২০১৪-২০১৫ সাল পর্যন্ত গড়ে ৩.৫ শতকরা হারে বৃদ্ধি পায়। ২০১৫ সালের পরে ২০১৯-২০২০ পর্যন্ত ৩.৫০ শতকরা হার থেকে ৯.০০ শতকরা হার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।” তিনি বলেন- সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালীন ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৪ মাসে ২০ টি জেলার ৯৬ টি উপজেলার জাটকা আহরণে বিরত থাকায় ৩ লক্ষ ৯০ হাজার ৭০০ টি জেলে পরিবারকে প্রতিমাসে ৪০ কেজি হারে মোট প্রায় ৬০ লক্ষ মেট্রিক টন চালসহ ২০০৯-২০১০ অর্থবছর হতে ২০২১-২০২২ অর্থবছর পর্যন্ত ৪ কোটি ৭০ লক্ষ ৭৪ হাজার ৬৫৬ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালীন ২০২১ সালে ৩৭ টি জেলার ১৫১ টি উপজেলার ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯৪৪ টি জেলে পরিবারকে পরিবার প্রতি ২০ কেজি হারে ১১ লক্ষ ১১ হাজার ৮৮৮ মেট্রিক টন খাদ্য প্রদান করা হয়েছে।” তিনি বলেন- “জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্যে বিষয়ভিত্তিক কারিগরি প্রশিক্ষন প্রদান সহ আয় বৃদ্ধি মূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপকরন সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। রাজস্ব কর্মকান্ডের পাশাপাশি এ সম্পদের উন্নয়নের ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান আছে। এর ফলে ইলিশ হচ্ছে আমাদের অন্যতম অর্থনৈতিক সম্পদ।” দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি এবং নিরাপদ মৎস্য উৎপাদন অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে কৃষিবিদ খন্দকার মাহবুবুল হক বলেন- “মৎস্য ও মৎস্য পণ্য বাংলাদেশের রপ্তানীর অন্যতম প্রধান খাত। নিরাপদ ও মানসম্পন্ন মৎস্য ও মৎস্য ুপণ্যের উপাদান ও মান নিশ্চিত করা মৎস্য অধিদপ্তরের দৃঢ় অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্তমানে দেশে চিংড়ি উৎপাদনে সকল স্তরে উত্তম মৎস্যচাষ অনুশীলন এবং প্রক্রিয়াকরণের সকল স্তরে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কার্যকর করা হয়েছে এবং নিরাপদ মৎস্য ও মৎস্য পণ্য উৎপাদন নিশ্চিতকরনার্থে ২০০৮ সাল হতে ঘধঃরড়হধষ জবংরফঁব ঈড়হঃৎড়ষ চষধহ (ঘজঈচ) বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং সেই অনুযায়ী মাছ ও চিংড়ির নমূনা সংগ্রহ ও পরীক্ষন করা হয়ে থাকে।”


তিনি বলেন- “রপ্তানী বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশের মৎস্য সম্পদ বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। এদেশ থেকে প্রধানত গলদা, বাগদা, হরিনাসহ বিভিন্ন জাতের চিংড়ি এবং মিঠা পানির মাছের মধ্যে রয়েছে – রুই, কাতলা, মৃগেল, আইড়, টেংড়া, বোয়াল, পাবদা, কৈ ইত্যাদি। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে রয়েছে- ভেটকি, দাতিনা, রুপচাঁদা, কাটল ফিস, কাঁকড়া ইত্যাদি বিদেশে রপ্তানী হয়ে থাকে।”
তিনি বলেন- “বৈশি^ক মহামারী কোভিড-১৯ এর কারনে বিশ^বাজার আর্থিক মন্দাবস্থা থাকা সত্বেও বর্তমান সরকারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহনের ফলে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানীর মাধ্যমে আয় করেছে ৫১৯১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। যা বিগত বছর থেকে প্রায় শতকরা ২৭ শতাংশ বেশী। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানী হয়েছে ৭৪০৪২.৬৭ মেট্রিক টন।
তিনি বলেন- “আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারিত হওয়ায় ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় মৎস্য আহরণের আইনগত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” তিনি বলেন- “গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণে পাইলট প্রকল্প” শীর্ষকে একটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, যা সুনীল অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা সংযোজনের পাশাপাশি দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।” কৃষিবিদ খন্দকার মাহবুবুল হক মৎস্য অধিদপ্তর এর কার্যক্রমকে প্রতিনিয়ত গতিশীল করতে তার নিয়ন্ত্রিত দপ্তরগুলোকে সার্বক্ষনিক সচল রাখতে কাজ করছেন। ফলে সাফল্য অর্জন সহজ হচ্ছে, মৎস্য সম্পদ সংরক্ষনে তিনি মূলত এ কাজ করছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন- “এ দেশের সামুদ্রিক অর্থনৈতিক এলাকায় মাছের শুষ্ঠু প্রজনন ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষনের জন্য ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর ২০ মে’ থেকে ২৩ জুলাই’ পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে সকল প্রকার নৌযান কর্তৃক সকল প্রজাতির মৎস্য এবং ক্রাস্টাশিয়ান্স আহরণ নিষিদ্ধ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রায় ৭০০০ বর্গকিলোমিটারে ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র এলাকায় সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুমে সকল প্রকার মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। সরকারের নানামূখী পদক্ষেপ গ্রহনের কারনে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন ৬.৮১ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নিত হয়েছে, যা বিগত ২০১০-২০১১ অর্থবছরের চেয়ে শতকরা প্রায় ২৫ শতাংশ বেশী”। পরিবেশবান্ধব চিংড়ি চাষের সম্প্রসারন প্রসঙ্গে কৃষিবিদ খন্দকার মাহবুবুল হক বলেন- “চিংড়ি বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান রপ্তানী পণ্য। বাগদা চিংড়ি বাংলাদেশের ভৌগালিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃত। চিংড়ি শিল্পে আরো গতিশীলতা আনতে সকল চিংড়ি খামার নিবন্ধিকরন ও লাইসেন্স প্রদানের উদ্যোগ গ্রহন। চাষী প্রশিক্ষন ও পরিবেশবান্ধব চিংড়ি চাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারন মান নিয়ন্ত্রন, ল্যাবরেটরী সমূহের আধুনিকায়ন ও চিংড়ি উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সকল স্তরে হ্যাসাপ ও ট্রেসিবিলিটি রেগুলেশন কার্যক্রম করার সর্বাত্বক উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।” তিনি এ বিষয়ে আরো বলেন-” ইতোমধ্যে ৭৫০০ জন চিংড়ি চাষী নিয়ে ৩০০ টি চিংড়ি ক্লাস্টার স্থাপন করা হয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে চিংড়ি খামারের উৎপাদন ২.৭৯ লক্ষ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। চিংড়ি সেক্টরে ট্রেসিবিলিটি সিস্টেম কার্যকর করার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে প্রায় ২ লক্ষ ৭ হাজার চিংড়ি খামার এবং ৯৬৫১ টি বাণিজ্যিক মৎস্য খামারের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে।” তিনি বলেন-“ প্রকৃত মৎস্যজীবিদের চিহ্নিত করে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে মৎস্য অধিদপ্তর নানামূখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এ পর্যন্ত ১৬ লক্ষ ২০ হাজার মৎস্যজীবি জেলেদের মাঝে পরিচয়পত্র বিতরন করা হয়েছে।” তিনি বলেন- “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে হালদা নদীতে “বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ” ঘোষনা করা হয়েছে। হালদা নদী বাংলাদেশের রুই মাছ জাতীয় মাছের এক অনন্য প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র এবং বলা যায় একমাত্র বিশুদ্ধ জীন ব্যাংক। হালদা নদী রক্ষায় টেকসই ও কার্যক্রম পদক্ষেপ গ্রহনের লক্ষ্যে “হালদা নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (ফেজ-১) চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রাকৃতিক উৎস এই হালদা নদী হতে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৮৫৮০ কেজি ডিম আহরিত হয়েছে। যা হতে উৎপাদিত রেনুর পরিমান ১০৫.৭২৫ কেজি।” তিনি আরো বলেন- “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সরকারের বিশেষ কর্মসূচী- “আমার গ্রাম, আমার শহর” বাস্তবায়নে মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক বাংলাদেশের দুটি গ্রামকে “ফিসার ভিলেজ” বা “মৎস্য গ্রাম” হিসেবে গড়ে তুলে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাখা দিয়ে তিনি বলেন-“ফিসার ভিলেজ বা মৎস্য গ্রাম বাস্তবায়নে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ঘড়িসার ইউনিয়নের হালিসার গ্রাম এবং নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলার দক্ষিন বিশিউড়া গ্রামকে আদর্শ মৎস্য গ্রাম হিসেবে বাস্তবায়নের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দুটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে।” এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন- “আদর্শ গ্রাম স্থাপনের মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়ন, মৎস্য চাষ, কৃষি-নির্ভর শিল্প, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, কৃষির বহুমূখীকরণ ও বাজার ব্যবস্থাপনাসহ নানাবিধ সেবা সম্প্রসারনের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং জীবন মান উন্নয়ন হবে।” এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন-“সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিসারিজ প্রজেক্ট এর আওতায় ৪৫০ টি মৎস্যজীবি গ্রাম উন্নয়নের কার্যক্রম বর্তমানে চলমান আছে। উক্ত গ্রাম সমূহের মধ্য হতে ১০০ টি মডেল মৎস্যজীবি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করা হবে।” মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ খন্দকার মাহবুবুল হক বলেন- “আমরা মৎস্য উৎপাদনের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন এবং তাদেরকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছি। এ কার্যক্রমে দারিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে যাদের পুকুর বা ডোবা আছে তাতে মৎস্য চাষে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রশিক্ষন দিয়ে আসছি।” পরিশেষে তিনি বলেন- “ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে মৎস্য অধিদপ্তর যে কাজ করছে তার সাফল্য অর্জনে ২০২৫ সাল নাগাদ ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন মৎস্য উৎপাদন সম্ভব হবে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ মৎস্য সম্পদে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপ দেওয়া সম্ভব হবে।” আমি মৎস্য অধিদপ্তরের নানাবিধ কার্যক্রম ও গৃহীত প্রকল্পের কার্যক্রম ব্যাখ্যা করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপির মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন- “মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে মৎস্য অধিদপ্তর নিরলসভাবে যে কাজ করছে তা আগামীতে মৎস্য সম্পদে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হবে। আমি তাদের এ কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করছি একই সাথে তাদের সকল প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ্যে সম্ভব সকল প্রকার সহযোগিতা করার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করছি।”

আরও খবর

Sponsered content

আরও খবর: অর্থনীতি

সিটির সঙ্গে একীভূত না করতে গভর্নরকে বেসিকের কর্মীদের স্মারকলিপি

ওসিডিএল এর নেতৃত্বে- নিরাপদ ও লাভজনক আবাসনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমিন সিটি পূর্বাচলের পথচলা শুরু হয়েছে

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে খেললে সরাসরি কারাগারে পাঠানো হবে: গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব এর দৃষ্টি আকর্ষণ : চট্টগ্রাম বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক-এর নাম প্রস্তাবে ব্যাপক অনিয়ম

এশিয়ান ক্যান্সার ইনস্টিটিউট বিডি প্রাইভেট লিমিটেড এবার কাজ করছেন মরণব্যাধি ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়ে

রিহ্যাব এর বার্ষিক সাধারণ সভা-২০২০ || আবাসন ব্যবসায়ীদের সার্বিক কল্যাণে কাজ করছি – আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট