অর্থনীতি

সিটির সঙ্গে একীভূত না করতে গভর্নরকে বেসিকের কর্মীদের স্মারকলিপি

  বিশেষ প্রতিবেদক : ১৭ এপ্রিল ২০২৪ , ৭:০৯:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ

বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে যাচ্ছে শতভাগ রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক। তবে সিটি ব্যাংক ছাড়া সরকারি খাতের অন্য যেকোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারকে স্মারকলিপি দিয়েছেন বেসিক ব্যাংকের কর্মীরা। গত মঙ্গলবার বেসিক ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে গভর্নরের দপ্তরে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করছেন, সরকারি ব্যাংক বেসরকারি খাতে একীভূত করা অসামঞ্জস্যপূর্ণ, অযৌক্তিক ও বৈষম্য। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, দেশের ক্ষুদ্র শিল্পে অর্থায়নের লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে বেসিক ব্যাংক লিমিটেড এর কার্যক্রম শুরু হয়, যা ১৯৯২ সালে শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে একটি রাষ্ট্র মালিকাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে সরকারী আর্থিক সেবা প্রদান করে আসছে যা ২০১৫ সালে পুরোপুরি রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে রুপান্তরিত হয়। বেসিক ব্যাংক একটি সরকারি খাতের ব্যাংক হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা করেছে এবং দীর্ঘ প্রায় ২৩ বছর ধরে বাংলাদেশ সরকারকে বিপুল অঙ্কের মুনাফা প্রদান করেছে, যা অন্যান্য ব্যাংকের কাছে ছিল উদাহরণ। শতভাগ রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকে অন্যান্য রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের অনুরুপ চাকুরী বিধিমালা অনুসরণ করা হয়, যা বেসরকারি মালিকানার ব্যাংকের সাথে পুরোপুরিভাবেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী বেসিক ব্যাংককে বিদ্যমান কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা গ্রেড নির্ধারণ এবং বেতন ও অন্যান্য ভাতাদি প্রদান করা হয়। পাশাপাশি, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের পেনশন সুবিধা বলবৎ রয়েছে। এছাড়া, বেসিক ব্যাংকে নিয়োগ ও পদন্নোতিতে সম্পূর্ণরুপে সরকারি ব্যাংকের অনুরূপ বিধিবিধান অনুসরণ করা হয়। এছাড়া, বেসিক ব্যাংকে ১২-তম থেকে ২০-তম গ্রেডের কর্মচারীগণের স্থায়ী চাকুরী বিদ্যমান রয়েছে। শ্রম আইন অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসিক ব্যাংকে সরকারি শ্রম অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত ও রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্ত কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
দেশের অন্যান্য সরকারি ব্যাংকের ন্যায় শতভাগ রাষ্ট্রমালিকাধীন বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হন। উল্লিখিত বিষয়গুলোর সাথে বেসরকারি কোন ব্যাংকের সামঞ্জস্যতা নেই।
এখানে আরো উল্লেখ্য যে, ইতোমধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অনেকেই সরকারি ব্যাংকের পদন্নোতির অধীনে পদন্নোতিপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনকে সোনালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদায়নের পর কয়েকমাস আগে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে এমডি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, রূপালী ব্যাংক ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে দুইজনকে ডিএমডি হিসেবে, একজনকে জনতা ব্যাংকে এবং দুইজনকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে জিএম হিসেবে পদায়ন করা হয়। উক্ত উধ্বর্তন নির্বাহীগণ অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে পদায়িত ব্যাংকে দায়িত্ব পালন করে আসছে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত একীভূতকরণের পদক্ষেপকে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই। এ লক্ষ্যে, সম্প্রতি টেলিভিশন, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের বরাতে আমরা জানতে পারি যে, রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের সাথে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাথে রাষ্ট্র মালিকানাধীন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক মার্জারের পরিকল্পনা করা গ্রহন করা হয়েছে যা সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে, বেসরকারি মালিকানাধীন সিটি ব্যাংকের সাথে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক মার্জারের বিষয়ে যে আলোচনা হয়েছে তা একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অযৌক্তিক।
যেখানে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক অন্য দুটি রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চলেছে সেখানে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংককে কেন বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সাথে মার্জারের আলোচনা চলছে? মার্জার প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই বৈষম্য কাম্য নয়। এ ধরণের বৈষম্যনীতি পরিহার করে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এর মার্জার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংককে অন্য একটি রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে মার্জারের জন্য আবেদন জানানো হয়।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন উপস্থিততে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংক একীভূত করার বিষয় জানানো হয়। এরও আগে গত ১৯ মার্চ সিটি ব্যাংকের পর্ষদকে বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তারপর সিটি ও বেসিক ব্যাংকের পর্ষদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। দুই ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। ব্যাংক দুটি একীভূত হলেও আগামী তিন বছর পৃথক আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করবে।
দেশের অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, বেসিক ব্যাংকের আর্থিক নিরাপত্তা দীর্ঘদিন যাবৎ কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ ও তাদের কাজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে বেসিক ব্যাংকের সাথে যে কোন সরকারী ব্যাংকের একত্রীকরণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

আরও খবর

Sponsered content

আরও খবর: অর্থনীতি

সিটির সঙ্গে একীভূত না করতে গভর্নরকে বেসিকের কর্মীদের স্মারকলিপি

ওসিডিএল এর নেতৃত্বে- নিরাপদ ও লাভজনক আবাসনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমিন সিটি পূর্বাচলের পথচলা শুরু হয়েছে

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে খেললে সরাসরি কারাগারে পাঠানো হবে: গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব এর দৃষ্টি আকর্ষণ : চট্টগ্রাম বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক-এর নাম প্রস্তাবে ব্যাপক অনিয়ম

এশিয়ান ক্যান্সার ইনস্টিটিউট বিডি প্রাইভেট লিমিটেড এবার কাজ করছেন মরণব্যাধি ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়ে

রিহ্যাব এর বার্ষিক সাধারণ সভা-২০২০ || আবাসন ব্যবসায়ীদের সার্বিক কল্যাণে কাজ করছি – আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট