অনলাইন ডেস্ক ১২ জানুয়ারি ২০২৩ , ৪:৪৮:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্দার খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে অর্থনীতি। বিষয়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, যেকোনো সময় পা হড়কে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অথচ গত জুন মাসেই সংস্থাটি বলেছিল, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে করোনা মহামারি—এমন আরও অনেক কারণই চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক। সদ্য প্রকাশিত গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস বা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বিশ্ব অর্থনীতির এই দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেছে। তারা মনে করছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করছে, তার প্রভাব মোকাবিলাই এই মুহূর্তের প্রদান চ্যালেঞ্জ। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেছেন, অর্থনীতির এই অধোগতির পরিসর অনেক বড় হবে। মানুষের আয় কমে যাবে। তাঁর মতে, কোভিডের আগের দশকের তুলনায় মানুষের আয় কমে যাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের আর্থিক সংকট ও ২০২০ সালের করোনা মহামারি ব্যতীত এই ১ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে ১৯৯১ সালের পর সর্বনিম্ন। মূলত যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও চীনে প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার কারণেই সামগ্রিকভাবে বিশ্ব অর্থনীতির হাল খারাপ হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য এসব দেশ। সে কারণে এসব অঞ্চলের অর্থনীতি গতি হারালে উন্নয়নশীল দেশের প্রবৃদ্ধির গতিও হ্রাস পাবে। ২০২০ সালের বিশ্বের প্রায় সব বড় দেশের অর্থনীতি সংকুচিত হয়। সেখান থেকে ২০২১ সালে অর্থনীতি অনেকটাই ঘুরে দাঁড়ায়। দুর্বল ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ২০২১ সালের উন্নত দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এরপর ২০২২ সালে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ২ দশমিক ৫ এবং ২০২৩ সালে তা হতে পারে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংকের সতর্কবার্তা, এ ধরনের শ্লথগতির অর্থ হলো বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তারা আশঙ্কা করছে, দীর্ঘমেয়াদি ও কঠোর মন্দা আসতে যাচ্ছে। আর এ বছর মন্দা হলে ১৯৩০-এর দশকের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। অর্থাৎ এক দশকের মধ্যে দুবার মন্দা হবে। সাধারণত, পরপর দুই প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হলে ধরে নেওয়া হয়, সেই দেশ মন্দার কবলে পড়বে।
বিশ্ব অর্থনীতির এই দুর্দশার জন্য উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত বছর বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বেড়েছে। রাজনৈতিক কারণে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়েছে। তবে নীতি সুদহার বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসছে। ২০২২ সালে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলছে, এ বছর তা ৫ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে। তবে মানুষের আয় কমে গেলে মূল্যস্ফীতি হ্রাসের প্রভাব অতটা অনুভূত হবে না বিশ্লেষকেরা এমনটাই মনে করেন।