হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ১০:০৮:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ
অর্থনৈতিক মন্দার কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে যাতে কোন জমি পতিত না থাকে। কিন্তু হবিগঞ্জ শহরের পাশেই নদী তীরের ৪শ’ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সেচ প্রকল্প পরিচালনাকারী কৃষকদেরকে মেশিন চালু করার আশ্বাস দিয়েও সেচ চালু না করায় এই অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। ভুক্তভোগী কৃষকরা প্রতিকার চেয়ে দৌড়াচ্ছেন বিভিন্ন দপ্তরে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৩ বছর পূর্বে হবিগঞ্জ শহরতলীর রিচি ইউনিয়নের নসরতপুর গ্রামে খোয়াই নদী সংলগ্ন উত্তরকূল মৌজার প্রায় ৪শ’ বিঘা জমি নিয়ে একটি সেচ প্রকল্পের অনুমোদন আনেন ওই গ্রামের সিরাজুল ইসলাম। বিগত দুই মৌসুম সুন্দরভাবে প্রকল্পটি পরিচালিত হয় এবং সেখানে ভাল ফসল উৎপাদন হয়। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত সেচ প্রকল্পের ড্রেইন তৈরি ও মেশিন বসানোর কাজ শুরু হয়নি। নামমাত্র কিছু অংশে ড্রেনের কাজ শুরু করার পর তা বন্ধ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা ও বিএডিসিকে বিষয়টি অবগত করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
সেচ প্রকল্পে ২৫ বিঘা জমি রয়েছে নসরতপুর গ্রামের মানিক মিয়া ও তার পরিবারের। তিনি জানান, নদীর সাথেই এই জমি হওয়ায় সেচ প্রকল্প পরিচালকের ব্যয় কম। সেচের জন্য প্রকল্পের মালিককে প্রতি বিঘায় দেড় মন ধান দেয়া হয়। সাধারণত ডিসেম্বর মাসেই সেচ চালু করার কথা থাকলেও জানুয়ারি মাসেও চালু করা হয়নি। এ জমির পাশের প্রকল্পের সকল জমিতে বোরো ধান লাগানো হয়েছে এবং ধান গাছ অনেক বড় হয়ে গেছে। সেচের অভাবে তাদের জমিতে এখনও হাল দেয়া হয়নি।
তিনি আরও জানান, উত্তরকূল মৌজার এই প্রকল্পভুক্ত জমিতে ১শ’ জন ভূমি মালিক রয়েছেন। আরও অনেক পরিবারের লোকজন এখানে শ্রমিক হিসাবে কাজ করে। উর্বর জমি হওয়ায় এখানে প্রতি বিঘায় গড়ে ২৫ মন ধান উৎপাদন হয়। সেচ প্রকল্প চালু না হলে ১০ হাজার মন ধান উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হবে গ্রামবাসী। যার মূল্য প্রায় কোটি টাকা।
নসরতপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান জানান, প্রকল্পের মাঝে তার পরিবারের ৩০ বিঘা জমি রয়েছে। সেচ প্রকল্পের মালিক সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে সে চালু করবে বলে আশ্বাস দিয়ে দুই মাস সময় অতিবাহিত করেছে। প্রকল্পের মাঝে তার নিজের কোন জমি না থাকায় গ্রামবাসীকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। তাই সে সেচ চালু করেনি। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।
নসরতপুর গ্রামের তৌহিদ মিয়া বলেন, প্রকল্পে তার ৫ বিঘা জমি রয়েছে। এই জমিতে ফসল না হলে তার পরিবার মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ ব্যাপারে সেচ প্রকল্পের মালিক সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিগত সময়ে অনেক জমির মালিক তার সেচের টাকা পরিশোধ করেননি। পৈত্রিক জমি বিক্রি করে সেচ প্রকল্প চালু করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে তলব করলে তিনি উপস্থিত হয়ে জবাব দিয়েছেন। কিন্তু জমির মালিকরা সেখানে যায়নি।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।