সারাদেশ

বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস ক্যান্সারে আক্রান্ত

  বিশেষ প্রতিনিধি: ৮ মে ২০২৩ , ১২:৪৩:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ

বরিশালে মহা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে অভিযুক্ত বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস। সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ সংক্রান্ত সেবা নিতে এসে দফায় দফায় পড়তে হয় সেবা গ্রহীতাদের ভোগান্তির মধ্যে। সরজমিনে এই তথ্যই উঠে এসেছে। বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের স্টাফরা দালালদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চালিয়ে যাচ্ছে সেবার নামে ঘুষ কার্যক্রম। দপ্তরের নীচতলার অফিস চত্বরেই এক প্রকার প্রকাশ্যে চলছে এ অনিয়ম। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন এ অঞ্চলের সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগীরা। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস চলাচ্ছে শক্তিশালী একটি দালাল সিন্ডিকেট। সদর সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার, সাব- এএসও, খারিজ সহকারী ও সার্ভেয়াররা মিলে গড়ে তুলেছেন এ সিন্ডিকেট। অভিযোগ উঠেছে পেশকার শহিদুল ইসলাম, রেকর্ড কিপার মোঃ ইয়াছিনসহ বেশ কয়েকজন বছরের পর বছর ধরে একই দপ্তরের কর্মরত থেকে চালিয়ে যাচ্ছে এসব পকেট কাটা বাণিজ্য। তাদের হয়ে অফিসের বাহিরে রয়েছে শক্তিশালী ও অভিজ্ঞ দালালচক্র। অভিযোগ রয়েছে, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ সংক্রান্ত সেবা সরকারের নির্ধারিত অর্থে মিলছে না। মিলছে না জমির পর্চা আর মৌজার নকশাও। সেবা পেতে সরকারের নির্ধারিত ফি ছাড়াও গুনতে হচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। এক প্রকার প্রকাশ্যই প্রতিনিয়িতই ঘটছে এধরনের অনিয়ম এবং অসংগতি।
সরজমিন অভিযোগে জানা যায়, আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট এলাকার আলম রায়হান এসেছিলেন আগৈলঝাড়া মৌজার একখণ্ড জমির পর্চা তুলতে। তিনি জানান, বেশ কয়েকদিন আগে পর্চা তুলতে অফিসে এলে কর্মচারীরা এখন হবে না বলে ফেরত পাঠিয়ে দেন। পরে বের হয়ে যাওয়ার সময় কথা হয় নিচতলায় এক দালালের সঙ্গে। ঐদিনই তিনি তুলে দেন ৭০০ টাকায় পর্চা। হাতে পাওয়ার পর দিতে হয়েছে আরো ৩০০ টাকা। অন্যদিকে চাঁদপুড়া ইউনিয়ন থেকে আসার রওশন আরা বেগম ও তার ছেলে ইব্রাহিম হোসেন বলেন, এখানে দালাল ও প্রতারকদের আনাগোনা অনেক বেশি। দালাল ও প্রতারক চক্র প্রকাশ্যেই অবস্থান করছে। তাদের মদদ দিচ্ছেন অফিসেরই সরকারি বেতন ভুক্ত কর্মচারীরা। এখানে টাকা ছাড়া কোনও কাজই হচ্ছে না। খতিয়ান উঠাতে ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা লাগে। ভূল সংশোধনে আবার সমপরিমাণ টাকা দিতে হয়। এখানে মনে হচ্ছে জোনাল হেড নিজেই অবৈধ অর্থ আয়ের কারণে তার অধিনস্থ কর্মচারীদের দিয়ে এই অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন অথবা তার অফিসের পিয়ন থেকে উচ্চ পদস্থ কর্মচারীদের কাছে নিজেকে সফে দিয়েছেন। বলাবাহুল্য বরিশাল সেটেলমেন্ট অফিসের ঘুষ আল্লাহর নেয়ামত মনে করে স্টাফরা ঘুষ নেন এবং সেবা নিতে আসা মানুষকে বসিয়ে রেখে ওয়াক্ত মতো নামাজ আদায় করা সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছে। এদৃশ্য দেখে যে কেউ হতবাগ হবে। এযেন দেখার কেউ নাই। সরজমিনে আরো দেখা যায়, সাহেবেরহাঠের বাসিন্দা আরিফুল হোসেন তার মায়ের নামের ২০ শতক জমি ৩০ ধারায় ‘বিশেষ আপত্তি কেস’ রায়ের অনুমতির জন্য আবেদন করেন। আবেদনটি সদর উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্টের কাছে পাঠানো হয়। এতে নির্ধারিত ফি মাত্র ২৫ টাকা। কিন্ত তার কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ১০০০ টাকা। এদের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্য টাকা দিয়ে কাজ পাওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে টাকা দিয়েও কাজ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন উজিরপুরের জলিল। তিনি জানান, চাহিদামত টাকা দিয়েও কাজ হচ্ছে না তার। দিনের পর দিন ঘুরছেন অফিসের নিচ তলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত। যখনি আসেন তখনই টাকা চেয়ে বসেন দালালরা। এখানকার ঘুস বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন বড় একটি যৌথ চক্র।
সম্প্রতি বাকেরগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকায় রেকর্ড কার্যক্রম চলমান। এই কার্যক্রম দিয়ারা সেটেলমেন্ট অফিসে বিএস জরীপ কার্যক্রম চলমান প্রায় চূড়ান্ত। এই সময় ভূলবশত কারও জমি অন্য কারও নামে রেকর্ড হয়ে গেলে ঐ ব্যক্তিকে ৩০ দিনের মধ্যে এখানে আপিল করতে বলা হয়েছে। আর এই আবেদনেও ইচ্ছামত আদায় হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। কেবল সাধারণ মানুষই নন, এখানে হয়রানির শিকার হচ্ছে প্রশাসনের লোক পরিচয় দিলেও বাড়তি টাকার মাফ নেই। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালি ও বরগুনাসহ উপজেলা সেটেলমেন্ট নিয়ন্ত্রণ হয় বরিশালের এই দপ্তর থেকে। অভিযোগ আছে প্রতি মাসে একবার ঐসব উপজেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিত করে মোটা অংকের অর্থ আদায় করা।
এদিকে, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের রেকর্ড কিপার মোঃ ইয়াছিন এর বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অভিযোগের বিষয় তার কাছ থেকে জানতে মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বরিশাল ভূমি অফিসগুলোর সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবৈধ আয়ের সম্পদ নিয়েও অনেক আলোচনা আছে। এ বিষয়ে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
দেশের জনগণ ভূমি অফিসগুলোতে কোন প্রকার হয়রানি শিকার না হয় এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল পদ্ধতির আয়ত্রে এনে ভূমি-সেবা সহজ করেছেন। ভূমি মন্ত্রী নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমান ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী আধুনিক ভূমি-সেবা জনগণের দোড়গড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করে যথেষ্ট সহজ সেবার প্রমাণ রেখেছেন। কিন্ত প্রধানমন্ত্রী ও ভূমি মন্ত্রীর শতচেষ্টা নিমেশেই ধ্বংশ করে দিচ্ছে ভূমি অফিসগুলোর বেশির ভাগ দুর্নীতিগ্রস্থ অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে করে অর্থনৈতিক লাভবান হচ্ছেন অসাধু দুর্নীতিবাজরা । পক্ষান্তরে বদনাম ও সমলোচনার মুখে পড়ছে সরকার প্রধানমন্ত্রীসহ ভূমিমন্ত্রী।
এবিষয়ে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার (উপ-সচিব) মোঃ রেজাউল বারী চিরাচরিত নিয়মে বলেন, বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে কোন অনিয়ম হয়না বলে তিনি দাবি করেন। তবে কোন অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে যথাযত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ বিষয়ে তিনি কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। তিনি আরো বলেন, মহা-পরিচালকের এ বিষয়ে কঠিন নির্দেশনাও রয়েছে।
বরিশাল সেটেলমেন্ট অফিসের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে ভূমি- মহাপরিচালক মোঃ আব্দুল বারীক সাহেবের সাথে দৈনিক সমাজ সংবাদের ঢাকা অফিসের বিশেষ প্রতিনিধি তার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বরিশাল সেটেলমেন্ট অফিসের অনিয়মের বিষয় অবগত করলে তিনি বলেন, বিষয়টি আগেও আমার নলেজে এসেছে। তিনি বলেন, কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ভূমি সেবা থেকে জনগণকে বঞ্চিত করা যাবে না। বিষয়টি আমি গুরুত্ব সহকারে দেখব। তিনি আরো বলেন, অসাধু দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায় ভূমি মন্ত্রণালয় নিবে না। আমি আশা করি আগামীতে ভূমি সেবা নিয়ে কোন অভিযোগ থাকবে না।

আরও খবর

শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪ ইং উপলক্ষে জেলার “শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান” নির্বাচিত || ফরিদপুরের ভাংগা’র ইকামাতে দ্বীন মডেল কামিল মাদ্রাসা

ফরিদপুরে কমিউটার ট্রেন এর যাত্রা বিরতি || ড. যশোদা জীবন দেবনাথের আবেদন মঞ্জুরের আশ্বাস দিলেন রেলমন্ত্রী মোঃ জিল্লুল হাকিম এমপি

সিটির সঙ্গে একীভূত না করতে গভর্নরকে বেসিকের কর্মীদের স্মারকলিপি

ঘটনাস্থল: ঢাকার উত্তরখান ॥॥ সন্ত্রাসী মোঃ আশিক মিয়ার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী নিরীহ মোঃ নুরুল হকের প্রায় ১৩০০ অযুতাংশ জমি অবৈধ দখলে রেখেছে ॥॥ প্রাণের ভয়ে আদালতে যেতে পারছেন না তিনি

শীর্ষ সন্ত্রাসী মোঃ সোহেল রেজার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ

রূপালী ব্যাংক লোকাল অফিসের মহাব্যবস্থাপক কর্তৃক আত্মসাৎকৃত প্রায় ৪১ লাখ টাকার এফ ডি আর এর অভিযোগটি অর্থঋণ মোকাদ্দমা ৯৬/২০১৯ এ বিচারের জন্য নথিভূক্ত হয়েছে

Sponsered content