অর্থনীতি

কর্পোরেশনের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম সফলভাবে শেষ করতে বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আলি কদরকে আগামী ৩ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের দাবী করছেন সংশ্লিষ্টরা

  অনক আলী হোসেন শাহিদী: ৫ মার্চ ২০২৩ , ৭:৫১:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

পর্যটন শিল্প বাংলাদেশের দেশীয় ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে এক অন্যতম সেবাধর্মী শিল্প প্রতিষ্ঠান। সেবাকে মানসম্মত শিল্পে রুপ দিতে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে।

১৯৭২ সালে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা হলেও প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সরকারের অদুরদর্শী মনোভাবের কারনে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। বর্তমান সরকারের বিগত ১৪ বছরে পর্যটন কর্পোরেশন ঘুরে দাড়িয়ে এক মহা সম্ভাবনাময় সেবা শিল্পে রূপ নিয়েছে। বিগত বছরে এ সেবা শিল্পকে প্রতিষ্ঠিত করতে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। অনেক প্রকল্পও ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। এসব প্রকল্প নিবিড় ও আন্তরিক তত্বাবধানে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন হবে আন্তর্জাতিক বিশে^ এক অনন্য সেবা শিল্প।

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এর প্রধান নির্বাহী হচ্ছেন- কর্পোরেশন এর চেয়ারম্যান। পর্যটন শিল্পের চলমান কার্যক্রম সফলতার সাথে শেষ করতে কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানকে কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিবিড় তদারকী করতে হয়। কিন্তু চলমান কাজের মাঝ পথে বদলীজনিত বা অবসরজনিত কারনে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রধান বা চেয়ারম্যানকে উক্ত পদ থেকে অব্যাহতি নিতে হয়। এই অব্যাহতি নেয়ার ফলে চলমান প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নের অনেক ক্ষতি হয়। উন্নয়ন কাজের স্বাভাবিক গতি অনেকাংশে থমকে যায়। পরবর্তী সময়ে যিনি উক্ত চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করতে আসেন- তাকে তার দায়িত্ব বুঝে নিতে অথবা কাজের পরিধির নানা বিষয় বুঝে উঠতে প্রায় ১ বছর সময় লেগে যায়। ঐ সময়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নানাভাবে নানা কারনে পিছিয়ে পড়ে। ফলে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যায়।

আমরা পর্যটন শিল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও বিভিন্ন চেয়ারম্যান এর কার্যকাল বিশ্লেষন করেছি। আমরা লক্ষ্য করেছি অধিকাংশ চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব পদ-মর্যাদায় থেকে কেউ কেউ গ্রেড-১ পদে থাকাকালীন সময়ে চাকুরীর শেষ বছরে এ কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার চাকুরীর শেষ পর্যায়ের এই সময়ে অনেকটা রুটিং কাজের মতো অনেকেই দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই দায়িত্ব পালনে কেউ কেউ এসেছেন ১ বছরের জন্যে। আবার কেউ কেউ ১.৫ বা ২ বছরের জন্যে। ফলে পর্যটন কর্পোরেশনের কাজের পরিকল্পনা প্রনয়ন, পরিকল্পনা গ্রহন, দরপত্র প্রক্রিয়া আহবান ও বাস্তবায়ন সময় পর্যন্ত মূলত অনেক চেয়ারম্যানই দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পায় না। এর ফলে একটি প্রকল্প প্রনয়ন, গ্রহন, বাস্তবায়ন ও বাস্তবায়নের ফলাফল দেখতে ও পর্যালোচনা করতে ১জন চেয়ারম্যানকে কমপক্ষে ৩ বছর ঐ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে ঐ সময় পর্যন্ত কার্যকাল লক্ষ্য করা যায়নি। অধিকাংশ চেয়ারম্যানই এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন চাকুরী জীবনের শেষ দু এক বছর করে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়ন কার্যক্রম আশানুরূপ ভাবে অগ্রসর হতে পারেনি।

আমরা বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এর চেয়ারম্যানদের কার্যকাল অনুসন্ধান করেছি। ১৯৭৩ সালের ১২ই মার্চ থেকে ১৯৭৩ সালের ২৮শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ মাস দায়িত্ব পালন করেছেন নুরুল কাদের খান। এরপর ধারাবাহিক ভাবে বিগত ৫০ বছরে দায়িত্ব পালন করেছেন ৪১ জন চেয়ারম্যান। বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আলি কদর ৪২তম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেছেন ২০২২ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারী। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে চেয়ারম্যান মোঃ আলি কদরের এ পদ থেকে অবসর গ্রহনের কথা রয়েছে। মোঃ আলি কদর এর অবসর গ্রহনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে; বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এর কর্মকর্তাদের মনে হতাশা ততই বাড়ছে। কিন্তু তাদের মধ্যে কেন এই হতাশা? আমরা এই হতাশার কারন অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছি- “বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের শীর্ষ পর্যায় থেকে অফিস সহায়ক পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী পর্যন্ত প্রত্যাশা করছেন- “কর্পোরেশনের চলমান কার্যক্রম সফলভাবে শেষ করতে বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আলি কদরের আন্তরিক নেতৃত্বকে অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।” এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরো বলেছেন- “চেয়ারম্যান মোঃ আলি কদর আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাাহে চাকুরীকাল শেষ হওয়ার কারনে অবসরজনিত ছুটিতে যাবেন, সেই দিকে তার খেয়াল নেই। তিনি কর্পোরেশনের কাজে দিন-রাত শ্রম দিচ্ছেন। প্রয়োজনীয় সভা করছেন। এমনকি গভীর রাত অবধি বিভিন্ন চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম তত্বাবধান করছেন গভীর আন্তরিকতার সাথে। চলমান প্রকল্পের অগ্রগতিকে কিভাবে অব্যাহত রাখা যায়- সেই বিষয়টিও দেখছেন। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কাজের প্রতি আন্তরিকতা ও কর্ম-চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।” উল্লেখ্য যে, বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। ঐ সব প্রকল্প শেষ হতে প্রায় ৩ বছর সময় লাগবে। ঐসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন- আন্তর্জাতিক বিশে^ অনন্য সেবাধর্মী শিল্প প্রতিষ্ঠানে রূপ নিবে। এর ফলে অর্জিত হবে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। এ কারনে এসব চলমান প্রকল্প শেষ করতে বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আলি কদরকে আগামী ৩ বছরের জন্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। যদি কোনভাবে ৩ বছরের জন্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ এই মুহুর্তে সম্ভব না হয়- তাহলে অবসরজনিত ছুটিকালীন ১ বছর তাকে কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান পদে কাজ করার সুযোগ দেয়া প্রয়োজন। এর ফলে কর্পোরেশনের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। এই মনোভাব পোষন করছেন কর্পোরেশনের উন্নয়ন কাজের সাথে সংযুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সরকার যে কোন যোগ্য কর্মকর্তাকে জনস্বার্থে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ৩ বছর পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারে। জনস্বার্থে ও প্রকল্প কাজের উন্নয়নের স্বার্থে এমন বহু নজির রয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন- “আমরা রাষ্ট্রের অব্যাহত উন্নয়ন ও জনস্বার্থকে সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই যোগ্য কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে থাকি।”

আমরা বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এর বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আলি কদরের কর্মজীবন অনুসন্ধান করেছি। মোঃ আলি কদর (পরিচিতি নং-৫৭৩২) অতিরিক্ত সচিব হিসেবে গত বছরের ১৮ই জানুয়ারী বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান পদে যোগদান করেন। গত বছরের ২৭ শে ফেব্রুয়ারী তিনি গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি ১১তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। ১৯৯৩ সালে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিসে সহকারী কমিশনার হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর থেকে তিনি সরকারের মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি দেশের বিভিন্ন উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি মাঠপর্যায়ে সিনিয়র সহকারী কমিশনার, উপাজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড, অর্থ বিভাগ ও জাতীয় পে-কমিশন-২০০৯ এ দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সংস্থায় যোগদানের পূর্বে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কর্মজীবনে তিনি দেশে ও বিদেশে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড, জার্মানী, সুইজারল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও চীন সফর করে বিভিন্ন প্রশিক্ষন কোর্সে অংশ গ্রহন করেন।

মোঃ আলি কদর শিক্ষা জীবনে ঢাকা বিশ^-বিদ্যালয় হতে ফিন্যান্স বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৬৪ সালের ৮ই এপ্রিল ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুরে জন্মগ্রহন করেন।

আমি বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মোঃ আলি কদরকে প্রশ্ন করেছিলাম- আপনিতো বিগত ১ বছর ধরে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। পর্যটন কর্পোরেশনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আপনার নেতৃত্বে উজ্জীবিত হয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সফলতার সাথে এগিয়ে নিচ্ছেন। এই পর্যায়ে জনস্বার্থে পর্যটন কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্যে সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে তাদের মনের অনুভূতি প্রকাশ করেছে- এই বিষয়ে আপনার অনুভূতি কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মোঃ আলি কদর বলেন- “হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে সারা জীবন দেশের জন্যে কাজ করেছি। পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পরে- প্রতিষ্ঠানটিকে স্বাবলম্বী প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ১ বছর অবসরজনিত ছুটি ভোগ করবো। এই সময়টিতে আমি অবসরে থাকতে চাই না। এই প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কাজ করে যেতে চাই। এর জন্যে সরকারকে আমার জন্যে অতিরিক্ত বেতন-ভাতাদি খরচ করতে হবে না। সরকার আমাকে এই দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিলে আমি আমার অব্যাহত সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাবো ইনশাআল্লাহ। কারন কাজই আমার ব্রত। কাজের মধ্যেই আমার আনন্দ।”

 

আরও খবর

Sponsered content

আরও খবর: অর্থনীতি

সিটির সঙ্গে একীভূত না করতে গভর্নরকে বেসিকের কর্মীদের স্মারকলিপি

ওসিডিএল এর নেতৃত্বে- নিরাপদ ও লাভজনক আবাসনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমিন সিটি পূর্বাচলের পথচলা শুরু হয়েছে

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে খেললে সরাসরি কারাগারে পাঠানো হবে: গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব এর দৃষ্টি আকর্ষণ : চট্টগ্রাম বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক-এর নাম প্রস্তাবে ব্যাপক অনিয়ম

এশিয়ান ক্যান্সার ইনস্টিটিউট বিডি প্রাইভেট লিমিটেড এবার কাজ করছেন মরণব্যাধি ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়ে

রিহ্যাব এর বার্ষিক সাধারণ সভা-২০২০ || আবাসন ব্যবসায়ীদের সার্বিক কল্যাণে কাজ করছি – আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট