জাতীয়

উদ্বোধনের ৬ মাসে যানবাহন পারাপার ২৮ লাখ, টোল আদায় ৪১০ কোটি টাকা

  অনলাইন ডেস্ক ৫ জানুয়ারি ২০২৩ , ৭:৩৭:০০ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সাহসের প্রতীক। সব বাধা-বিপত্তি দূরে সরিয়ে গত বছরের ২৫ জুন উদ্বোধন হয় স্বপ্নের এ সেতুর। তার আগেই নির্ধারণ করা হয় সেতু কেন্দ্র করে সম্ভাব্য মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি। সেতুর ডিটেইলড ইকোনমিক অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস প্রতিবেদন অনুযায়ী, টোল আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করা হয় বছরে ১৬শ কোটি টাকার কিছু বেশি। তবে প্রথম ছয় মাস ৯ দিনে টোল আদায় হয়েছে ৪১০ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক। এই সময়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে ২৮ লাখের অধিক। জানা যায়, পদ্মা সেতু দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে এক দশমিক ২৩ শতাংশ অবদান রাখার কথা। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়ার কথা ২ দশমিক ৩ শতাংশ। সেতু চালুর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ২১টি জেলা সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে চাঙা হচ্ছে এসব জেলা। পণ্য পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়েছে সহজ। শীত ও বর্ষা মৌসুমে ফেরি পারাপার নিয়ে নেই বিড়ম্বনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য মনোভাব, দৃঢ়তায় দেশের মানুষ শেষ পর্যন্ত এই সেতুর সুফল ভোগ করতে পারছে। সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে মোট টোল আদায় হয়েছে ৪০৯ কোটি ৮৭ লাখ ১০ হাজার ১৫০ টাকা। এই সময়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে ২৮ লাখ ৩৫ হাজার ৯৪১টি যানবাহান পার হয়েছে। বর্তমানে পদ্মা সেতু দিয়ে দৈনিক যানবাহন পারাপার হচ্ছে গড়ে ১৪ হাজার ৭১৮টি। প্রতিদিন গড়ে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি সাড়ে ১২ লাখ টাকার মতো। এভাবে চলতে থাকলে বছরপূর্তিতে প্রায় ৮শ কোটি টাকার কিছু কম-বেশি টোল আদায় হতে পারে। এখন পর্যন্ত পূর্বাভাসের চেয়ে প্রতিদিন যানবাহন কম চলেছে ৯ হাজারের মতো। বছরপূর্তিতে আয়ও কম হতে পারে পূর্বাভাসের চেয়ে ৮শ কোটি টাকার মতো কম। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদাউস সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমরা লক্ষ্য অনুযায়ী পদ্মা সেতুতে টোল আদায় করছি। যে রেটে টোল আদায় হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে কোনো সমস্যা হবে না। তবে টোল আদায় নির্ভর করে যানবাহন পারাপারের ওপর। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু থেকে মাসে টোল আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় বছরে ১৩৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। বছরের হিসাবে যা ১ হাজার ৬০৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এ টাকা দিয়ে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াও নির্মাণ খরচের ঋণ পরিশোধ করার কথা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের। কোনো উন্নয়ন সহযোগী বা প্রতিষ্ঠানকে নয়, স্বয়ং বাংলাদেশ সরকারকে ৩৫ বছরে সুদসহ ৩৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মিত। এর পুরোটাই সরকারের কাছ থেকে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ঋণ হিসেবে নেয়। চুক্তির অনুচ্ছেদ ২ মোতাবেক ঋণের অর্থ প্রকল্প সমাপ্তির পর বার্ষিক ১ শতাংশ হারে সুদসহ ৩৫ বছরে ১৪০ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া নকশা প্রণয়নের সময় নেওয়া ২১১ কোটি টাকার বিপরীতে পরিশোধ করতে হবে ৩৪০ কোটি টাকা। এর আগে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০১০ সালে দাখিল করা পদ্মা সেতুর ডিটেইলড ইকোনমিক অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস সম্বলিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের ট্রাফিক ফোরকাস্ট অনুযায়ী ফেরির টোল হারের দেড়গুণ হিসাবে মাসে টোল আদায় হওয়ার কথা ১৩৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই সরকার আশা করেছিল বছরে ১ হাজার ৬০৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা টোল আদায় হবে। সূত্র জানায়, অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে সম্পাদিত ঋণচুক্তিতে উল্লিখিত ৩৫ বছর মেয়াদি লোন রিপেমেন্ট শিডিউল অনুযায়ী, সেতুতে যানবাহন চলাচলের প্রথম বছরেই ৫৯৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এটা ধীরে ধীরে বেড়ে কোনো কোনো বছর ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করতে হবে। তাছাড়া সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন ব্যয়, নদীশাসন, ভ্যাট ও ট্যাক্স পরিশোধ সবই করতে হবে টোলের টাকা থেকে। টোল আদায়ের ক্ষেত্রে এসব বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পদ্মা সেতুর টোলহার

মোটরসাইকেলের টোল ১০০ টাকা (বর্তমানে চলাচল বন্ধ), বড় বাসের টোল ২ হাজার ৪শ টাকা, মাঝারি ধরনের বাসের টোল ২ হাজার টাকা, কার ও জিপের ৭৫০ টাকা, চার এক্সেল ট্রেইলার ৬ হাজার টাকা, মাইক্রোবাস ১৩শ টাকা এবং মিনিবাসের (৩১ সিট বা তার কম) টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪শ টাকা। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৯ সালে পদ্মা সেতুর টোল থেকে আয় হওয়ার কথা ১ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা। আর ২০৫০ সালে এই সেতু থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রকল্প ফিজিবল করতে আমরা অনেক সময় যেন-তেন করে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করি। যেমন হাওরে উড়াল সড়ক নির্মাণের প্রকল্প নেওয়ার জন্য পদ্মা সেতুর চেয়ে বেশি ট্রাফিক দেখানো হয়েছে। কিন্তু আদৌ কি সম্ভব? পদ্মা সেতুতে কী পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে এটা বড় কথা নয়। বাস্তবতা হচ্ছে কৌশলগত কারণে পদ্মা সেতু আমাদের দরকার। যেমন অস্ট্রেলিয়ায় দেখবেন সড়কের অভাব নেই অথচ যানবাহনের দেখা মেলে না। কিন্তু কৌশলগত কারণে এটা করতে হয়। বছরে কত কোটি টাকার টোল আদায় হলো এটা বড় কথা নয়, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে পদ্মা সেতু নির্মাণ জরুরি ছিল।’

আরও খবর

Sponsered content

আরও খবর: জাতীয়

৩৩তম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলায় বিশেষ অতিথি বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন ড. মিল্টন বিশ্বাস

শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪ ইং উপলক্ষে জেলার “শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান” নির্বাচিত || ফরিদপুরের ভাংগা’র ইকামাতে দ্বীন মডেল কামিল মাদ্রাসা

ফরিদপুরে কমিউটার ট্রেন এর যাত্রা বিরতি || ড. যশোদা জীবন দেবনাথের আবেদন মঞ্জুরের আশ্বাস দিলেন রেলমন্ত্রী মোঃ জিল্লুল হাকিম এমপি

ঘটনাস্থল: ঢাকার উত্তরখান ॥॥ সন্ত্রাসী মোঃ আশিক মিয়ার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী নিরীহ মোঃ নুরুল হকের প্রায় ১৩০০ অযুতাংশ জমি অবৈধ দখলে রেখেছে ॥॥ প্রাণের ভয়ে আদালতে যেতে পারছেন না তিনি

শীর্ষ সন্ত্রাসী মোঃ সোহেল রেজার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ

রূপালী ব্যাংক লোকাল অফিসের মহাব্যবস্থাপক কর্তৃক আত্মসাৎকৃত প্রায় ৪১ লাখ টাকার এফ ডি আর এর অভিযোগটি অর্থঋণ মোকাদ্দমা ৯৬/২০১৯ এ বিচারের জন্য নথিভূক্ত হয়েছে