অন্যান্য

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে প্রায় ১৭৩৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ শেষ করেছে।

  অনক আলী হোসেন শাহিদী: ২২ মার্চ ২০২৩ , ১১:০৪:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

নদীর তীর সংরক্ষণ, বন্যা নিয়ন্ত্রন, নদীর স্বাভাবিক নাব্যতা সুরক্ষা, খাদ্য ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) গত ২০২১-২০২২ অর্থ-বছরে প্রায় ১৭৩৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। এ কাজ গুলো ২০২২ সালের ৩০শে জুনের মধ্যে শেষ হয়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) সারাদেশে ২৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই উন্নয়ন কার্যক্রম শেষ করেছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ফলে নদীর তীর সংরক্ষন এবং বাঁধের ঢাল সংরক্ষন কাজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নদী ভাংগন রোধ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রন সম্ভব হয়েছে। নদী ড্রেজিং এর ফলে নদীর পানি পরিবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে- ফলশ্রুতিতে নদী ভাঙ্গনরোধসহ স্বাভাবিক নাব্যতা সুরক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। একই সাথে বন্যা নিয়ন্ত্রন এবং লবনাক্ত পানি প্রবেশরোধ সম্ভব হয়েছে, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও এসব উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করার ফলে টেকসই পদ্ধতিতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের ব্যাপক উন্নয়ন সার্বিত হয়েছে।

গত অর্থবছরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড যে ২৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে তার বিবরন ও অবস্থান আমরা অনুসন্ধান করেছি। এ উন্নয়ন কাজগুলো সারাদেশের অর্থনৈতিক চিত্র এবং জীবনযাত্রার মানকে অনেকটা বদলে দিয়েছে।

বাপাউবো- ঢাকা কেন্দ্রীয় অঞ্চলে মোট ৪টি উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। এই কাজগুলো হচ্ছে- বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প। দ্বিতীয়বার সংশোধনীর মাধ্যমে নতুন ধলেশ^রী-পুংলী-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম এর আওতায় প্রকল্পটি ২০১০ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৮৯২ কোটি ৪৬ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। ময়মনসিংহ জেলার গফরগাও উপজেলাধীন চরআলগী ইউনিয়নের চতুর্দিকে বেড়ীবাধ নির্মান প্রকল্প। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জানুয়ারীতে শুরু হয়ে ২০২২ সালের ৩০শে জুন শেষ হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৪৪ কোটি ৮২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা নামক এলাকাকে যমুনা নদীর ভাঙ্গন হতে রক্ষার্থে নদীর তীর সংরক্ষন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুন মাসে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২৬২ কোটি ৭৬ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা। নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় ডিংগাপোত হাওরের অভ্যন্তরে খাল পূনঃখনন ও ফসল পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে কাজটি শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৪৫ কোটি ১৩ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা।

বাপাউবো- কুমিল্লা অঞ্চল গত অর্থ বছরে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্প দুটি হচ্ছে- কুমিল্লা জেলার পুরাতন ডাকাতিয়া-নতুন ডাকাতিয়া নদী সেচ ও নিস্কাশন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৪৩ কোটি ৮২ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। লক্ষীপুর জেলার সদর উপজেলায় ডাকাতিয়া নদীর ভাঙ্গন রক্ষাকল্পে তীর সংরক্ষন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে কাজটি শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে কাজটি শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩৭ কোটি ৭৮ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা।

বাপাউবো- দক্ষিন-পূর্বাঞ্চল তথা চট্টগ্রাম গত অর্থ বছরে মোট ৪টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার পোল্ডার নং-৬৪/১এ, ৬৪/১বি এবং ৬৪/১সি এর সমন্বয়ে ক্ষতিগ্রস্থ অবকাঠামো সমূহের পূনর্বাসন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের কাজটি ২০১৫ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ব্যয় হয়েছে ২৮৩ কোটি ১৩ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা। চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার পোল্ডার নং-৭২ এর ভাঙ্গন প্রবন এলাকায় স্লোপ প্রতিরক্ষা কাজের মাধ্যমে পূনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্পের কাজটি ২০১৭ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজে ব্যয় হয়েছে ১৯৯ কোটি ১৩ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা। চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর সংরক্ষন ও বন্যা নিয়ন্ত্রন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে কাজটি শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। উক্ত কাজে ব্যয় হয়েছে ১৫২ কোটি ৩৩ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় শাহপরীর দ্বীপের পোল্ডার নং-৬৮ এর বাঁধ পূনঃনির্মান ও প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে কাজটি শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। উক্ত কাজে ব্যয় হয়েছে ১৪৯ কোটি ৬৮ লক্ষ ২৩ হাজর টাকা।

বাপাউবো-উত্তরাঞ্চল রংপুরে গত অর্থ-বছরে একটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। উক্ত প্রকল্পের কাজটি হচ্ছে- যমুনা নদীর ডান তীরের ভাংগত হতে গাইবান্ধা জেলার সদর উপজেলা এবং গনকবরসহ ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষা প্রকল্প। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে কাজটি শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে কাজটি শেষ হয়েছে। উক্ত কাজে ব্যয় হয়েছে ২৬৭ কোটি ৩৪ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা।

বাপাউবো-উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে রাজশাহীতে একটি প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। উক্ত প্রকল্পটি হচ্ছে- জয়পুরহাট জেলার তুলশীডাংগা, ছোট যমুনা, চিড়ি ও হারাবাতি নদী পূনঃখনন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজটি শেষ হয়েছে। উক্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১২৭ কোটি ৮ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা।

বাপাউবো-পশ্চিমাঞ্চল ফরিদপুরে দুইটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্প দুইটির একটি হচ্ছে- ফরিদপুর জেলার আড়িয়াল খাঁ নদীর তীর সংরক্ষন ও ড্রেজিং প্রকল্প। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের মার্চ মাসে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ২৯৯ কোটি ৯৮ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা। অন্য প্রকল্পটি হচ্ছে- রাজবাড়ী শহর রক্ষা প্রকল্প (ফেজ-২)। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ৩৭৫ কোটি ৬১ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা।

বাপাউবো- দক্ষিণাঞ্চল বরিশাল অঞ্চলে ৫টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- বরিশাল জেলার সাতলা-বাগধা প্রকল্পের পোল্ডার পূনর্বাসন প্রকল্প (১ম সংশোধিত)। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হয়ে শেষ হয়েছে ২০২২ সালের জুন মাসে। এ প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ৩৭ কোটি ৯৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। দ্বিতীয় প্রকল্প হচ্ছে- মেঘনা নদীর ভাঙ্গন হতে বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া-গোবিন্দপুর এলাকা রক্ষা প্রকল্প। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হয়ে কাজটি শেষ হয়েছে ২০২২ সালের জুন মাসে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ৩৭৫ কোটি ৬৮ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। দক্ষিণাঞ্চল বরিশালের তৃতীয় প্রকল্প হচ্ছে- পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলায় ভুবনেশ^র নদী পূনঃখনন এবং পোনা নদী ও ভুবনেশ^র নদীর ভাঙ্গন হতে বিভিন্ন স্থাপনা/সম্পদ রক্ষা প্রকল্প। প্রকল্পটি ২০১৮ সালে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ৩১ কোটি ৬৪ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা। চতুর্থ প্রকল্প হচ্ছে-মেঘনা নদীর ভাঙ্গন হতে ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলাধীন লর্ড হাডিঞ্জ ও ধলি গৌরনগর বাজার রক্ষা প্রকল্প (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটি জুলাই ২০১৮ সালে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ৩৪৫ কোটি ৭৪ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা। দক্ষিণাঞ্চলের পঞ্চম প্রকল্পটি হচ্ছে- ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলাধীন তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙ্গন হতে বকসী লঞ্চঘাট হতে বাবুরহাট লঞ্চঘাট পর্যন্ত প্রতিরক্ষা ও ড্রেজিং কার্যক্রম। এর সাথে রয়েছে কুকরী-মুকরী দ্বীপ বন্যা নিয়ন্ত্রন প্রকল্প। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ৪৮২ কোটি ৫৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।

বাপাউবো- দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল খুলনাতে গত অর্থ বছরে দুইটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- বাগেরহাট জেলার পোল্ডার নং-৩৬/১ এর পূনর্বাসন প্রকল্প। প্রকল্পটি ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ১৯৪ কোটি ৭৭ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা। অন্য প্রকল্পটি হচ্ছে- বাগেরহাট জেলায় ৮৩টি নদী/খাল পূনঃখনন এবং মংলা-ঘসিয়াখালী চ্যানেলের নাব্যতা বৃদ্ধি প্রকল্প। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পটি শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১৭৫ কোটি ১২ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা।

বাপাউবো- বৈদেশিক ঋণ সহায়তাপুষ্ট একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এ প্রকল্পটি হচ্ছে- ব্লু-গোল্ড প্রোগ্রাম (বাপাউবো কম্পোনেন্ট)। প্রকল্পটি ২০১৩ সালের জানুয়ারী মাসে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৬০৩ কোটি ৩৬ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা।

বাপাউবো- তাদের এ উন্নয়নমূখী কার্যক্রম বিশেষ প্রকল্পের আওতায় মোট ৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এ প্রকল্পগুলো হচ্ছে- বরিশাল জেলার কারখানা, বিঘাই ও পায়রা নদীর ভাঙ্গন হতে শেখ হাসিনা সেনানিবাস এলাকা রক্ষার নিমিত্তে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প। এ প্রকল্পটি ২০২২ সালের জানুয়ারী মাসে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৩০ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা। বাপাউবোর স্থাপনা সমূহে প্রয়োজনীয় আবাসিক, প্রশাসনিক ও অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো নির্মান প্রকল্প। ২০২১ সালের জুন মাসে শুরু হয়ে প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৮৮ লক্ষ ৯ হাজার টাকা। বরিশাল সেচ প্রকল্পের পূনর্বাসন কার্যক্রম। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুলাই মাসে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৭৮ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা। চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ প্রকল্প পূনর্বাসনের লক্ষ্যে বিস্তারিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কার্যক্রম। এ কার্যক্রমটি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৭৭ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা। টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলায় প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল বির্নিমানে ভাঙ্গন প্রবন এলাকা চিহ্নিতকরন ও প্রতিরক্ষাকল্পে নিমিত্ত বিস্তারিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কার্যক্রম। এ কার্যক্রমটি ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৭১ লক্ষ ২ হাজার টাকা। এছাড়া Updating feasibility study for Kurigram Irrigation project প্রকল্প কার্যক্রম। এ কার্যক্রমটি ২০২১ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৮৬ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সারাদেশে বাস্তবায়িত এ ২৮টি প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ে সরাসরি কাজ করেছেন সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীদের নেতৃত্বে একদল দক্ষ প্রকৌশলী। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে তত্ত্বাবধায়ন প্রকৌশলী, প্রধান প্রকৌশলীবৃন্দসহ বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক, মহাপরিচালক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, উপমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী পরিদর্শক করে কাজের গুনগতমান পর্যবেক্ষনসহ প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

বাপাউবোর এ ২৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের সুফল সম্পর্কে জানতে আমি কথা বলেছি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীদের সাথে। এসব প্রধান প্রকৌশলীদের মধ্যে রয়েছেন- ঢাকা কেন্দ্রীয় অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম তাহমিদুল ইসলাম, পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ মনিরুজ্জামান, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী শীবেন্দু খাষ্টগীর, উত্তরাঞ্চল রংপুরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম, পশ্চিমাঞ্চল নিয়ন্ত্রিত ফরিদপুর পওর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ সফিউদ্দিন ও দক্ষিণাঞ্চল- বরিশালএর প্রধান প্রকৌশলী মজিবুর রহমান।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) তাদের গত অর্থবছরের ২৮টি প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়ন শেষ করেছে। এর মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভাবে প্রতিশ্রুত বেশ কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রতিশ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ঐ অঞ্চলের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

বাপাউবো- তাদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কতটা নিয়মতান্ত্রিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে- তার জন্য রয়েছে একজন প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে মনিটরিং দপ্তর। ২৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধান প্রকৌশলী মনিটরিং (পুর) বলেন- “বাপাউবো তাদের বাস্তবায়িত প্রকল্পের গুনগতমান ও পরিমাণ সংরক্ষনে সদা তৎপর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে তথ্য ও প্রযুক্তি (আইটি) ভিত্তিক উন্নয়ন একই সাথে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমানে চতুর্থ শিল্প-বিল্পব মোকাবেলায় বাপাউবোর জনবলকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এর ফলে বাপাউবোর কার্যক্রমকে টেকসই ও মনিটরিং করা সহজ হচ্ছে। এর জন্য আমরা সার্বক্ষনিকভাবে কাজ করে থাকি। আমরা বিশ^াস করি কাজের গুনগতমান নির্ধারিত ডিজাইন অনুযায়ী বাস্তবায়িত হলে টেকসই সুফল পাওয়া সম্ভব। সেই লক্ষ্য অর্জনেই আমরা কাজ করছি।”

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মোঃ নুরুল ইসলাম সরকার বলেন- “বাপাউবো সবসময়ই গনমানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়ন করে আসছে। এসব কাজ বাস্তবায়নের ফলে নদীর তীর সংরক্ষন এবং বাঁধের ঢাল সংরক্ষন কাজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নদী ভাঙ্গনরোধ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রন সম্ভব হয়েছে। নদী ড্রেজিং এর ফলে নদীর পানি পরিবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে নদী ভাঙ্গনরোধ ও স্বাভাবিক নাব্যতা সুরক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।” তিনি বলেন- “এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বন্যা নিয়ন্ত্রিত এবং লবণাক্ত পানি প্রবেশরোধ সম্ভব হয়েছে। এর ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।” এ প্রসঙ্গে তিনি পরিশেষে বলেন- “বাপাউবো এর মাধ্যমে এসব কাজ বাস্তবায়নের ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে টেকসই পদ্ধতির মাধ্যমে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বাপাউবোর নিরন্তর কর্ম-তৎপরতার ফলে টেকসই সেচ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ দেশে জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির পরেও বাপাউবোর ব্যাপকভাবে সেচ প্রকল্প সম্প্রসারনের ফলে দেশের খাদ্য-নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে।” পরিশেষে তিনি বলেন- “বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নিরন্তরভাবে এ ধারা অব্যাহত রাখতে বদ্ধ পরিকর।”

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর কার্যক্রম বাস্তবায়ন শেষ করেছেন ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে। এ সময়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ছিলেন কবির বিন আনোয়ার। তিনি এ কার্যক্রমের প্রায় প্রায় প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন। কাজের গুনগতমান প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি এসব বাস্তবায়িক উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে বলেন- “এ দেশের গনমানুষের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেল্টা প্লান বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সুখী সমৃদ্ধ, আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত দেশ গড়তে কাজ করছেন। বিশেষ করে পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য রক্ষা, কৃষি ক্ষেত্রে নিরন্তর সেচ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমরা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়ন করেছি। আমি বিশ^াস করি আগামী ২০৩০ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।” তিনি আরো বলেন- “বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনে সুনিদৃষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। এ পর্যন্ত আমরা এ ক্ষেত্রে ৭০ ভাগ সফলতা অর্জন করেছি। প্রতিটি প্রকল্প নিবিড়ভাবে অনুসন্ধান করে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রতিটি ডিজাইন তৈরী করেছি। এ ধরনের ২২টি প্রকল্পের কার্যক্রম আমি সরাসরি পর্যবেক্ষন করেছি। ফলে কাজগুলো টেকসইভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে।”

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বধানে পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ২৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৭৩৫ কোটি টাকা। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী- জাহিদ ফারুক এমপি, উপমন্ত্রী- এ কে এম এনামুল হক শামীম সার্বক্ষনিক তদারকী করেছেন। প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। এ উন্নয়ন কাজ সম্পর্কে মন্তব্য করে গিয়ে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী- জাহিদ ফারুক বলেন- “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে সুখী সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশে রুপ দিতে নিরলস কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশকে বিশে^র মাঝে আধুনিক ও স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে যে স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন- সেই স্বপ্নের অংশ হিসেবেই পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। গত অর্থ বছরে আমরা জনস্বার্থে ২৮টি প্রকল্পের কাজ শেষ করেছি। এর সুফল ইতোমধ্যে দেশবাসী ভোগ করছে। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে আমাদের এ উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।”