জাতীয়

আজ মহিমান্বিত লাইলাতুল বরাত, ইবাদত-বন্দেগি ও তওবার রাত

  অনলাইন ডেষ্ক ৭ মার্চ ২০২৩ , ৮:৪২:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ

পবিত্র আরবি শাবান মাস একটি মোবারক মাস। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন। রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে তিনি এ মাসকে পালন করতেন। এ মাসের একটি রাতকে মুসলমানরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, মধ্য শাবানের এই রাত আমাদের এই জনপদে ‘শবেবরাত’ হিসেবে পরিচিত। আজ সেই মহিমান্বিত রাত। ফারসি ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত এবং ‘বরাত’ অর্থ সৌভাগ্য। এ দু’টি শব্দ নিয়ে ‘শবেবরাত’, অর্থাৎ সৌভাগ্যের রজনী। আরবিতে একে বলে ‘লাইলাতুল বরাত’। আজ ১৪ শাবান রোববার দিবাগত রাতটিই পবিত্র শবেবরাত। আল্লাহতায়ালা এ রাতে বান্দাদের জন্য তার অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন। মহিমান্বিত এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তি ও পাপ-তাপের জন্য গভীর অনুশোচনায় আল্লাহর দরবারে সকাতরে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ভারতীয় উপমহাদেশ বিশেষ করে বাংলাদেশে শবেবরাতকে ‘ভাগ্যরজনী’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়। এদিকে মুসলমানরা শবেবরাতে নফল নামাজ, জিকির-আজকার, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বিনিদ্র রাত কাটায় ও আল্লাহতায়ালার কাছে বিনম্র প্রার্থনা করেন ভবিষ্যৎ জীবনে পাপ-পঙ্কিলতা পরিহার করে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের জন্য। একই সঙ্গে মৃত আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। পাড়া-মহল্লার মসজিদগুলোতে সন্ধ্যার পর থেকেই ওয়াজ-নসিহত, মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। অনেকে গভীর রাত অবধি ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থেকে শেষ রাতে সেহির খেয়ে পরদিন নফল রোজা রাখেন। বাঙালি মুসলিম সমাজে শবেবরাতের একটি আনন্দঘন সামাজিক দিকও রয়েছে। এদিন মুসলমানদের বাড়িতে সাধ্যানুযায়ী হালুয়া, পায়েস, রুটিসহ নানা উপাদেয় খাবার রান্না করা হয়। এসব খাবার আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে পাঠানো এবং গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিতরণ করা হয়। অনেকে মুক্ত হস্তে দান-খয়রাতও করে থাকেন। বরাবরের মতোই শবেবরাতের পরদিন অর্থাৎ কাল সোমবার সরকারি ছুটি থাকবে। শবেবরাতের বরকত, ফজিলত ও মর্যাদা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা মধ্য শাবানের রাতে তার সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরেক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। এদিকে আটজন সাহাবির সূত্রে বিভিন্ন সনদে এই হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, শবেবরাত ফজিলতময় এবং এ রাতে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে ক্ষমা করে থাকেন। তবে ক্ষমা পাওয়ার শর্ত হলো- শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকা। এ দু’টি বিষয় থেকে যারা মুক্ত থাকবেন তারা কোনো অতিরিক্ত আমল ছাড়াই এ রাতের বরকত ও ক্ষমা লাভ করবেন। কিন্তু শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হতে না পারলে অন্য আমল দিয়ে ওই রাতের বরকত ও ক্ষমা লাভ করা যাবে না। দুঃখের বিষয় হলো, শবেবরাতে আমরা অনেক নফল আমল করলেও ওই দু’টি শর্ত পূরণের চেষ্টা খুব কম মানুষই করে থাকি। আল্লাহতায়ালা যেকোনো সময় তার বান্দার দোয়া-প্রার্থনা কবুল করতে পারেন। তার পরও বছরের এমন কিছু বিশেষ সময়-ক্ষণ রয়েছে, যে সময়গুলোর মর্যাদা ও ফজিলত অন্য সময়ের তুলনায় বেশি। সেসব দিন-ক্ষণে কৃত ইবাদত, দোয়া-মোনাজাতের মর্যাদা বেশি ও সওয়াবের মাত্রা অপরিসীম। এ বিষয়গুলো মুসলমানদের মনে শবেবরাতে ইবাদত-বন্দেগি ও বেশি বেশি নেক কাজ করার স্পৃহাকে জাগিয়ে তোলে। ফলে দেশব্যাপী শবেবরাত উপলক্ষে সৃষ্টি হয় এক ধর্মীয় আবহ। যা মানুষের ধর্মীয় বিষয়াদি পালনের আগ্রহ সৃষ্টিতে বিরাট সহায়ক হয়। আমাদের দেশ মুসলিম প্রধান একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও সাম্প্রতিককালে অপরাধপ্রবণতা এত অধিক প্রবৃদ্ধিমান যে, প্রতিদিন ভোরবেলা পত্র-পত্রিকা ও অন্য প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত খবরাদির প্রতি লক্ষ্য করলে লজ্জায় মাথা নত হয়ে যায়। এমতাবস্থায় চলমান সমাজের অপরাধ প্রবণতা রোধে বেশি বেশি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন আবশ্যক। শবেবরাত তেমনই একটি অনুষঙ্গ। বস্তুত অপরাধের মূল উৎসসমূহ বন্ধ করতে দরকার সমাজের লোকদের পরিশুদ্ধি। ধর্মীয় এই চেতনা ও দৃঢ় মানসিকতা সমাজ মানসে সৃষ্টিতে শবেবরাতসহ যেসব ধর্মীয় কার্যকলাপ অধিক সহায়ক, সেসব কাজই আজ আমাদের সামনে উপস্থিত। আল্লাহ আমাদেরকে আন্তরিক পরিশুদ্ধতা লাভের সুযোগ হিসেবে দোয়া কবুল ও সংশোধনের দ্বারা জীবনকে শুদ্ধ ও পবিত্র করার যে সুযোগ দিয়েছেন আমাদের দিয়েছেন; এখন ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনের সবার কর্তব্য হলো, তার সদ্ব্যবহার করা। নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা।

 

আরও খবর

Sponsered content

আরও খবর: জাতীয়

৩৩তম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলায় বিশেষ অতিথি বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন ড. মিল্টন বিশ্বাস

শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪ ইং উপলক্ষে জেলার “শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান” নির্বাচিত || ফরিদপুরের ভাংগা’র ইকামাতে দ্বীন মডেল কামিল মাদ্রাসা

ফরিদপুরে কমিউটার ট্রেন এর যাত্রা বিরতি || ড. যশোদা জীবন দেবনাথের আবেদন মঞ্জুরের আশ্বাস দিলেন রেলমন্ত্রী মোঃ জিল্লুল হাকিম এমপি

ঘটনাস্থল: ঢাকার উত্তরখান ॥॥ সন্ত্রাসী মোঃ আশিক মিয়ার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী নিরীহ মোঃ নুরুল হকের প্রায় ১৩০০ অযুতাংশ জমি অবৈধ দখলে রেখেছে ॥॥ প্রাণের ভয়ে আদালতে যেতে পারছেন না তিনি

শীর্ষ সন্ত্রাসী মোঃ সোহেল রেজার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ

রূপালী ব্যাংক লোকাল অফিসের মহাব্যবস্থাপক কর্তৃক আত্মসাৎকৃত প্রায় ৪১ লাখ টাকার এফ ডি আর এর অভিযোগটি অর্থঋণ মোকাদ্দমা ৯৬/২০১৯ এ বিচারের জন্য নথিভূক্ত হয়েছে